দেশে শহরাঞ্চলের মতোই গ্রামাঞ্চলেও সিজারিয়ান প্রসবের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই বাড়ছে অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান প্রসব। এতে মা এবং শিশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেসরকারি হাসপাতালের ব্যবসায়ী মনোভাব অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান বৃদ্ধির জন্য অন্যতম কারণ।

এছাড়া শিক্ষিত ও চাকরিজীবীদের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান মনোভাব সবচেয়ে বেশি। রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান সেকশন বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশ ও তার বাস্তবায়ন’ শিরোনাম শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এ কথা বলেন।

আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলোজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) সভাপতি অধ্যাপক ফারহানা দেওয়ান এবং বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম। ফারহানা দেওয়ান তার প্রবন্ধে অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান সেকশন বন্ধে সেবা প্রদানকারীর ভূমিকা বিষয়ে আলোকপাত করেন।

তিনি বলেন, ২০০৪ সালে দেশে সিজারিয়ান প্রসবের হার ছিল চার শতাংশ। ২০১৭-১৮ সালে এই হার বেড়ে হয় ৩৩ শতাংশ। যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ডের হিসাবে স্বীকৃত হারের দ্বিগুণেরও বেশি। এরপর ২০২৩ সালে প্রকাশিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ পপুলেশন রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (নিপোর্ট)-এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সি-সেকশন প্রসবের হার ২০১৭ সালে ৩৪% থেকে ২০২২ সালে ৪৫% হয়েছে। অর্থাৎ ১৮ বছরে সিজারিয়ান প্রসবের হার বেড়েছে ১১ গুণের বেশি।

বেসরকারি এবং এনজিওভিত্তিক সুবিধাগুলিতে সিজারিয়ান প্রসবের হার ৮৩.৭০% এবং পাবলিক সুবিধার রয়েছে সরকারিতে এর হার ৪৩.৯০%। প্রবন্ধে আরো বলা হয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতে সিজারিয়ান প্রসবের হার ২২% (২০১৯-২০২১), পাকিস্তানে ২২ শতাংশ (২০১৭-২০১৮), নেপালে ১৬ শতাংশ (২০১৬) এবং মায়ানমারে (২০১৫-১৬) ১৭% পাওয়া গেছে।

সিজারিয়ান সেকশন অপ্রয়োজনীয় কেন তা তুলে ধরে ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম বলেন, সিজারিয়ান সেকশন করা হয় জীবন রক্ষার জন্য, কিন্তু সিজারিয়ান সেকশনের হার এত বেশি হওয়ার পরও মাতৃ মৃত্যু হার কমছে না। এই মৃত্যুর হার না কমার জন্যই আমরা মনে করছি এই সি-সেকশনগুলো অপ্রয়োজনীয় বা মাত্রাতিরিক্ত।